Friday, April 18, 2008

মাননীয় সরকার বাহাদুর , আপনার হাতের ঐ ফলটি কিন্তু লিচু নয়

মুরুব্বিরা বলতেন , ছাগল দিয়ে হালচাষ হয় না । কোন কালে কোন যুগে কেউ ছাগল দিয়ে হালচাষ করার চেষ্টা করে এমন সিদ্ধান্তে এসেছিলেন বলে ইতিহাসে পাওয়া যায় না । ছাগল দিয়ে যে হালচাষ করা যায় না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত টানতে হলে ছাগলকে ফসলী জমিতে নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়ে না ।

এই যে ছাগলকে হালচাষে না নামিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া যায় , ছাগল দিয়ে হালচাষ সম্ভব নয় , এটাকে বলে সাধারন জ্ঞান । কমনসেন্স । কমনসেন্সের অভাব ঘটলে ছাগল দিয়ে কী করা যায় , কী করা যায় না সেটা নির্ধারন করা যায় না , বরং নিজেই ছাগল হিসেবে পরিচিত হতে হয় ।

আমাদের সরকার বাহাদুরের সেই কমনসেন্সের ঘাটতি দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি । এই এপ্রিল মাসে এপ্রিলফুল কোয়ালিটির সবচাইতে বড়ো রসিকতা হচ্ছে এ দেশের নারী নীতি পর্যালোচনার করার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বায়তুল মোকাররমের খতিবকে ।


"জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি কমিটি " নামের কমিটির প্রধান হচ্ছেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ নূরউদ্দীন !!!

এই খবরটি যদি ১লা এপ্রিল তারিখে জানতে পারতাম তাহলে এপ্রিল ফুল বলে উড়িয়ে দিতে পারতাম । কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে আজ ১৮ এপ্রিল । সুতরাং এটি রসিকতা নয় ।

রসিকতা যদি না হয়ে থাকে তাহলে এটা কী ? এটা হচ্ছে নপুংসক শাষকগোষ্ঠীর চরম ইতরামির একটা নমুনা ।

জনবিচ্ছিন্ন , অনিবার্চিত অর্বাচীন সরকারগুলো সবসময়ই ঝাড় ফুক পানিপড়ার উপরে নির্ভর করতে চায় । এটা আজকেই প্রথম দেখা যাচ্ছে না । সেই আইয়ূব খান থেকে শুরু হয়েছে । স্বৈরশাষক এরশাদের সময় সাঈদাবাদী হুজুর ডিমপড়া দিয়ে মহিলাদের গর্ভবতী করতেন আর ১৯ জন মন্ত্রী মিলে হুজুরের ট্যালকম পাউডারের বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলেন। তাছাড়া আটরশি পীরের মুরিদ এরশাদ হ্যান কোন ছ্যাবলামি না করেন নি তার পীর সাহেবদের জন্য ।

বর্তমান সামরিক সরকারকে দেখা যাচ্ছে তারা আর পীরসাহেবদের উপর ভরসা করতে পারছেন না । তারা বেছে নিয়েছেন আরো সংঘবদ্ধ একটা চক্র ,আর সেটা হচ্ছে জোব্বাধারী বায়তুল মোকাররমের কিছু দাঙ্গাবাজ । এই দাঙ্গাবাজরা যা খুশী তা করতে পারছে , তারা জাতীয় মসজিদের দক্ষিন গেট অবরুদ্ধ করে ফেলে কয়েকঘন্টার জন্য , তারপর তাদের খুশীমতো কাজ করিয়ে নেয় ।

একটি দেশকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে তাড়িয়ে নিতে এর চাইতে বড়ো উদাহরন আর কী হতে পারে ?

যাক , অনেক দূ:খের কথা বললাম ।
এখন একটি কৌতুক্তি দিয়ে শেষ করি ।

নরকের দ্বারে কয়েকজন আসামী :

মৃত্যুর পরে কয়েকজন নরকবাসীকে নরকের দরজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে । সেখানে তাদেরকে বসিয়ে রেখে বলা হল , তোমাদের কার কী ফল পছন্দ , বলতে পারো । সবাই তার নিজ নিজ পছন্দের ফলের নাম বলল । সবাইকে তাদের পছন্দ অনুযায়ী একটা করে ফল হাতে তুলে দেয়া হল নরক ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ।
সব নরকবাসী তো বেজায় খুশী । যাক , নিজের পছন্দ মতো ফল যদি খাওয়া যায় , তাহলে দেখা যাচ্ছে নরক বিষয়টা মন্দ নয় ।


কিছুক্ষন পরে একজনকে ডেকে নেয়া হল নরকের ভেতরের কক্ষে ।
সেখানে নরকসর্দার স্বয়ং যমরাজ বসে আছেন । প্রথম নরকবাসী কক্ষে প্রবেশ করল ।

যমরাজ জিজ্ঞেস করলেন - তোমার পছন্দের ফল কী ?
লোকটি ভয়ে ভয়ে জবাব দিল - আজ্ঞে , আমলকি ।
যমরাজ বললেন - হুম , ভালো । এখন তুমি তোমার হাতের আমলকিটি তোমার পশ্চাৎদেশে প্রবেশ করাও । এটাই তোমার শাস্তি । প্রতিদি একটা করে আমলকি তোমার পশ্চাৎদেশ দিয়ে প্রবেশ করাবে । লোকটি অশ্রুসজল চোখে আদেশ পালন করল ।


এবার ডাকা হল দ্বিতীয়জনকে ।
একই ভাবে প্রশ্ন করা হল- তোমার পছন্দের ফল কী ?
জবাব এলো - আজ্ঞে , লিচু ।
যমরাজ বললেন , প্রতিদিন পশ্চাৎদেশে একটা করে লিচু ঢুকানো হবে , এখন শুরু করো ।

লোকটি এই আদেশ শুনে ঠা ঠা করে জোরে হেসে উঠল। সবাই তো খুব অবাক । লিচুর মতো একটা ফল পেছন দিকে প্রবেশ করানোর আদেশ পেয়ে এই লোক হাঁসছে কেন ?

যমরাজ জিজ্ঞেস করলেন - আশ্চর্য ! তুমি হাসছ কেন ?

লোকটি হেসে বলল - হুজুর , আমার জন্য আর চিন্তা কী , আমি তো তবু লিচু পছন্দ করেছি । লাইনের পেছনে একজনকে দেখে এলাম । ঐ বেটা তো পছন্দ করেছে একটা কাঠাল ।


ফুটনোট :
মাননীয় সরকার বাহাদুর , আপনারা আমাদের পশ্চাতে একটা করে লিচু প্রবেশ করাচ্ছেন । আমরা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছি । কারন আমরা জানি ,যে ধর্মান্ধ , উগ্র গোষ্ঠীকে আপনারা মদদ দিচ্ছেন , পছন্দ করে ভালোবেসে হাতে নিয়েছেন , সেটি লিচু নয় । সেটি আসলে কাঠাল ।
সময়মতো আপনারা সেটা টের পাবেন । আপনাদের সেই বিড়ম্বনার কথা কল্পনা করে , আমরা এই বেলা লিচু নির্যাতন সত্ত্বেও হাসিমুখে দাড়িয়ে আছি ।

No comments: